ইরানের ছোড়া বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র শুক্রবার গভীর রাতে তেল আবিব ও আশপাশের এলাকায় তাদের বাড়িঘরে আঘাত হানে। যা ইসরাইলে ব্যাপক ধ্বংস ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ হামলায় ৩ জন নিহত ও ১৭৩ জন আহত হয়েছেন।
হামলার সময় ওইসব এলাকায় সাইরেন বেজে ওঠে এবং আতঙ্কিত লাখ লাখ ইসরাইলি নিরাপদ কক্ষ ও বোমা আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছোটেন।
যদিও ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে। তবে বেশকিছু ক্ষেপণাস্ত্র — যেগুলোতে শক্তিশালী বিস্ফোরক ছিল— সেগুলো তেল আবিব, রামাত গান ও রিশন লেৎসিয়নের আবাসিক ভবনে সরাসরি আঘাত হানে এবং রীতিমত ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি হয়।
তালি হোরেশ নামে তেল আবিবের এক বহুতল ভবনে বসবাসকারী ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট-কে বলেন, ‘আমরা দরজা বন্ধ করে কম্পিউটারে খবর দেখছিলাম। হঠাৎ এমন একটা বিস্ফোরণ হলো, মনে হলো পুরো ভবন কেঁপে উঠলো’।
‘একটু পর ধোঁয়া শনাক্তকারী যন্ত্র বেজে ওঠে। আমরা দরজা খুলে দেখি পুরো বসার ঘর ধোঁয়ায় ভরা। তখন আমরা সবাই নিরাপদ কক্ষে ফিরে যাই’, যোগ করেন তিনি।
হোরেশ ও তার পরিবার দুই ঘণ্টা ধরে নিরাপদ কক্ষে আটকে ছিলেন। পরে উদ্ধারকারীরা এসে তাদের বের করে।
হোরেশ বলেন, ‘নিচতলার ক্ষয়ক্ষতি ছিল ভয়াবহ। পানির পাইপ ফেটে গেছে, দরজাগুলো উড়ে গেছে, লবিতে ছিল বিশৃঙ্খলা’।
আইডিএফ হোম ফ্রন্ট কমান্ডের কর্নেল (অব.) মাইকেল ডেভিড বলেন, ‘এটা এমন এক মাত্রার ঘটনা, যা আমরা আগে কখনো দেখিনি’। এতে ৬৩ জন আহত হন, যার মধ্যে গুরুতর আহত এক নারীর পরে মৃত্যু হয়।
শনিবার সকালে রিশন লেৎসিয়নে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র আবাসিক ভবনে আঘাত হানে। এতে ৭৩ বছর বয়সি ইসরাইল অ্যালোনি ও এক নারী নিহত হন। এছাড়া অন্তত ২০ জন আহত হন। ধ্বংসস্তূপ থেকে ৩ মাস বয়সি এক শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস ক্যাপ্টেন ইদান চেন বলেন, ‘আমি প্রথমে শিশুটিকে উদ্ধার করে একজন পুলিশ অফিসারের হাতে দেই, তারপর বাকিদের বের করতে শুরু করি। আশেপাশে আগুন ছিল, ওপরে মানুষ আটকে ছিল, চারপাশে ধ্বংসাবশেষ — একেবারে দুঃস্বপ্নের মতো পরিস্থিতি’। শিশুটি সামান্য আহত হয়েছিল।
আভি গাতেনিও নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘সাইরেন বাজতেই আমি আর বাচ্চারা নিরাপদ কক্ষে দৌড়ে যাই। ৫ মিনিট পরে বিস্ফোরণের আওয়াজ পাই। বাইরে গিয়ে দেখি চারপাশটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত। এক বৃদ্ধ দম্পতিকে বের করি, যেন আর কিছু ভেঙে না পড়ে। তারপর আমি আবার বাচ্চাদের কাছে ফিরে যাই। ওরা খুব ভয় পেয়েছিল’।
তিনি আরও বলেন, ‘ঈশ্বরের কৃপায় আমাদের কিছু হয়নি। কিন্তু জানালার কাচ যেভাবে ছিটকে পড়েছিল, ওগুলো একজন শিশুর ধমনীতে লাগলে তা প্রাণঘাতী হতো’।
ইরানের এই হামলা শুরু হয় ইসরাইলি হামলার একদিনেরও কম সময়ের মধ্যে। যখন ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও সামরিক নেতাদের লক্ষ্য করে প্রথম দফা হামলা চালায়। এসব হামলায় অন্তত ৮৪ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়।
ইসরাইলের দাবি, তারা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পর্যায়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থেকে বিরত রাখতে চায়। যদিও ইরান বলে আসছে, তারা পরমাণু অস্ত্রে বিশ্বাস করে না। কিন্তু বর্তমানে তারা ৬০% পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। যা বেসামরিক ব্যবহারের চেয়ে অনেক বেশি এবং অস্ত্রমান ইউরেনিয়ামের মাত্রার খুব কাছাকাছি।
সূত্র: টাইমস অব ইসরাইল