সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চারদিনের সীমিত সংঘাত ও তার পরবর্তী কূটনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে উভয় দেশের নৌবাহিনীর সক্রিয় অবস্থান বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আগামীতে দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাতে নৌবাহিনীর বড় ভূমিকা থাকবে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন। খবর আল-জাজিরার।
২০২৫ সালের ৩০ মে, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ভারতীয় বিমানবাহী জাহাজ ‘আইএনএস বিক্রান্ত’-এ গিয়ে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, নীরব থেকেও ভারতীয় নৌবাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ভাবুন তো, যখন এরা মুখ খুলবে তখন কী হবে!
তার দু’দিন পর, ১ জুন, পাকিস্তান নৌবাহিনী একটি মহড়ার ঘোষণা দেয়, যেখানে তারা দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর ও উপকূলে ‘সাব- কনভেনশনাল ও অ্যাসিমেট্রিক হুমকি’ প্রতিহত করার অনুশীলন চালায়।
এই প্রতিক্রিয়াগুলো ঘটে ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান — ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং পাকিস্তানের ‘অপারেশন বুনিয়ান মারসুস’—শেষ হওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে।
এপ্রিলের ২২ তারিখ ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক হামলায় ২৬ বেসামরিক মানুষ নিহত হন, যাদের অধিকাংশই পর্যটক ছিলেন। ভারত এ হামলার জন্য ‘পাকিস্তান-সমর্থিত’ জঙ্গিদের দায়ী করে, যদিও পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করে।
এরপর ৭ মে, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত, যেখানে অন্তত ৫১ জন নিহত হয়। পরবর্তী তিনদিন দুই দেশ একে অপরের বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলা চালায়।
যদিও সংঘাতকালে দুই দেশের নৌবাহিনী সরাসরি জড়িত হয়নি, তবে তারা পরস্পরের গতিবিধি নজরে রাখে এবং সক্রিয় প্রস্তুতি নেয়। স্যাটেলাইট ফুটেজে দেখা যায়, ভারতীয় বিমানবাহী জাহাজ আইএনএস বিক্রান্ত আরব সাগরে পাকিস্তানের দিকে অগ্রসর হয়েছিল। পাকিস্তানও তার নৌবহর প্রস্তুত রাখে এবং একটি তুর্কি যুদ্ধজাহাজ করাচিতে এসে যৌথ মহড়া চালায়।
ভারত এখন একটি ‘ব্লু ওয়াটার নেভি’ গড়তে চাইছে, অর্থাৎ এমন একটি নৌবাহিনী যেটি মহাসাগর পাড়ি দিয়ে অভিযান চালাতে পারে। ভারতের নৌবাহিনীতে আছে ২৯টি বড় যুদ্ধজাহাজ, দুটি বিমানবাহী জাহাজ ও ১৮টি সাবমেরিন।
অন্যদিকে পাকিস্তানের নৌবাহিনী তুলনামূলক ছোট ও প্রতিরক্ষামূলক। তাদের মূল লক্ষ্য উপকূলীয় এলাকা এবং সামুদ্রিক বাণিজ্য রক্ষা করা। পাকিস্তানের নৌবাহিনীতে নেই বিমানবাহী জাহাজ বা ডেস্ট্রয়ার, তবে আছে ১১টি ফ্রিগেট ও ৮টি সাবমেরিন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতের সংঘাতে নৌবাহিনী আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে। ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য এবং পাকিস্তানের মহড়া সেই সম্ভাবনার দিকেই ইঙ্গিত দেয়। তবে এমন সংঘাতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।
পাকিস্তানি বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত যদি করাচির মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলা চালায়, তবে তা বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া ডেকে আনবে। তবে সম্ভবত ভারত গোপনে নজরদারি চালিয়ে প্রয়োজন হলে হামলা চালাবে, যেটি আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধে ভারত-পাকিস্তানের নৌবাহিনী বিভিন্নভাবে অংশ নেয়। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতীয় নৌবাহিনী পাকিস্তানের করাচি বন্দরে ভয়াবহ হামলা চালায়, অনেক জাহাজ ধ্বংস হয় এবং পাকিস্তানের সাবমেরিন ‘ঘাজি’ ডুবে যায়।