অস্ট্রেলিয়ার বিস্তীর্ণ ভূমির ওপর দিয়ে টানা ৩৫ দিন দৌড়ে রেকর্ড গড়েছেন ব্রিটিশ অ্যান্ডিউরেন্স অ্যাথলেট ও ইনফ্লুয়েন্সার উইল গুডজ। পার্থ থেকে শুরু করে সিডনির বন্ডাই বিচ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৩ হাজার ৮৪১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছেন। এই পথ অতিক্রম করতে প্রতিদিন গড়ে তাঁকে ১১০ কিলোমিটার করে দৌড়াতে হয়েছে, যা প্রায় আড়াইটি ম্যারাথনের সমান।
আজ মঙ্গলবার সিএনএন জানিয়েছে, উইলের কাছে দৌড়ের প্রথম ৯ দিন ছিল এক প্রকার দুঃস্বপ্ন। দৌড়ানো, খাওয়া, আবার দৌড়ানো—এই চক্রটি বিরামহীন চলতেই থাকত। আর বিশ্রামের সময়েও ঘুম হতো অস্থির ও জ্বরগ্রস্ত স্বপ্নে ভরা। উইল বলেন, ‘মনে হতো জেগে থেকেও স্বপ্ন দেখছি।’ তাঁর শরীর এবং হাড়-মাংস জুড়ে জমে গিয়েছিল গভীর ব্যথা। কিন্তু ওই সময়টিতে তিনি তাঁর দৌড়ের একটি ক্ষুদ্র অংশমাত্র পেরিয়েছিলেন। তাঁর সামনে পড়ে ছিল হাজার হাজার কিলোমিটার পথ।
প্রথম ৯ দিনের স্মৃতিচারণা করে উইল বলেন, ‘স্বপ্ন দেখছিলাম, আমি দৌড়াচ্ছি এবং সেই স্বপ্নেই ভয় পাচ্ছিলাম। চারদিকে ফাঁকা বিশাল প্রান্তর থাকার পরও আমার মনে হতো, আমি একরকম বন্দী। রাতগুলো যেন কিছুতেই শেষ হতো না।’
তবে দশম দিন থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। শরীর ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠছিল। প্রতিদিনের প্রায় ১১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া কিছুটা সহনীয় হয়ে ওঠে। শেষের দিকে টানা পাঁচ দিন দারুণ কেটেছে তাঁর।
গত ১৯ মে সিডনির বন্ডাই বিচে পৌঁছান উইল। সেখানে অপেক্ষায় ছিল শত শত মানুষ। তাঁর এই দৌড় যদি অনুমোদন পায়, তবে এটি হবে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দেওয়া দ্রুততম রেকর্ড। এর আগের রেকর্ডটি ছিল ৩৯ দিন ৮ ঘণ্টা ১ মিনিটের।
এই সাফল্য সম্পর্কে উইল গুডজ বলেন, ‘মনে হয়েছে, যেন এক বিশাল মানসিক বোঝা কাঁধ থেকে নেমে গেছে। আনন্দ, চোখের পানি, ঘোলাটে আবেগ—সব একসঙ্গে আসছিল। একটা ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর যেমনটা হয়, ঠিক তেমন।’
দৌড় শেষ করার পর মায়ের স্মৃতির উদ্দেশে বন্ডাই বিচে ফুলের তোড়া রাখেন উইল। তাঁর মা ২০১৮ সালে নন-হজকিন লিম্ফোমায় (এক ধরনের ক্যানসার) আক্রান্ত হয়ে মারা যান। উইল তাই এই দৌড়ের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার তিনটি ক্যানসার তহবিলের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, ‘মায়ের ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই আমাকে আমার নিজের কষ্টকে তুচ্ছ মনে করিয়েছে। আমি যখন খুব কষ্টে পড়ি, তখন মায়ের কথা মনে করি।’
অস্ট্রেলিয়া অভিযানে প্রতিদিন ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠে দৌড় শুরু করতেন উইল। তাঁকে অনুসরণ করে চলা একটি দলের সঙ্গে ছিলেন তাঁর বাবাও। বাবা তাঁকে সেরিয়াল আর ব্ল্যাক কফি খাওয়াতেন। কোচ তাঁর পায়ে টেপ লাগাতেন কিংবা ম্যাসাজ করতেন। দিনে ৭ মাইল করে ভাগ করে দৌড়াতেন। মাঝে মাঝে বিরতি নিয়ে খানিকটা খাবার—স্মুদি, কেক, পাস্তা, ফল, দই বা মধু গ্রহণ করতেন। রাত শেষে গোসল করে ডিনার করতেন দলের সঙ্গে, মাঝে মাঝে একটি বিয়ারও খেতেন।
তিনি বলেন, ‘এই ছোট ছোট স্বাভাবিক জিনিসগুলো একটু স্বস্তি দিত। নয়তো প্রতিদিন একই চক্র—খাওয়া, দৌড়ানো, খাওয়া, দৌড়ানো—পাগল করে দিত।’
শারীরিকভাবে এই দৌড় ছিল নিষ্ঠুর। আঙুলে ফোসকা, অ্যাকিলিস অ্যাঙ্কেলে ব্যথা, পেশির ক্ষয়, শরীরের ওজন ১০ কেজির বেশি কমে যাওয়া—এসব ছিল নিত্যসঙ্গী। তবু হাল ছাড়েননি উইল।