শুক্রবার, ০১ আগস্ট ২০২৫
শুক্রবার, ০১ আগস্ট ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
আন্তর্জাতিক

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আল-আকসায় প্রবেশ, ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা ইসরায়েলিদের

আবারও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে ইসরায়েলি কট্টরপন্থীরা। সোমবার (২৬ মে) ‘জেরুজালেম দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত মিছিল চলাকালে এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ইসরায়েলের উগ্রবাদী ইহুদিরা মিছিলের সুযোগে আল-আকসা কম্পাউন্ডে প্রবেশ করে। এই সময় ইসলাম ধর্মের পবিত্র স্থানটিতে প্রায় ২ হাজার ইসরায়েলি উপস্থিত ছিল, যার মধ্যে ছিলেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী এবং ডানপন্থী নেতা ইতামার বেন-গভিরও।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, বেন-গভিরের সঙ্গে ইসরায়েলি সংসদ সদস্য ইৎজাক ক্রুজার এবং নেগেভ ও গালিলি অঞ্চলের মন্ত্রী ইৎজাক ভাসেরলফও আল-আকসায় প্রবেশ করেন। ভিডিওতে বেন-গভির বলেন, 'আমরা এই যুদ্ধে বিজয়ের প্রার্থনা করেছি এবং হামাসের হাতে আটক সবাইকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রার্থনা করেছি।'

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘জেরুজালেম মার্চ’ নামের এই মিছিলে অংশ নেওয়া ইসরায়েলিরা পুরাতন জেরুজালেমের মুসলিম পাড়া অতিক্রম করে ‘আরব নিপাত যাক’, ‘তোমাদের বসতি পুড়ে যাক’—এমন উসকানিমূলক স্লোগান দেয়। এই অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই দখলকৃত পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের অবৈধ ইহুদি বসতিতে বসবাসকারী।

ইতিপূর্বেও পুলিশের নিরাপত্তায় আল-আকসায় প্রবেশ করেছেন বেন-গভির। তার এই ধরনের কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক মহলে বারবার উসকানিমূলক ও উত্তেজনা সৃষ্টিকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নিলেও, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তারা ঘোষণা দেয় যে ইসলাম ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ মুসলিম কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকবে। এই চুক্তির আওতায়, আল-আকসা প্রাঙ্গণে কেবল মুসলিমদের প্রার্থনার অনুমতি রয়েছে। প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছে জর্ডান সরকারের নিযুক্ত ইসলামিক ওয়াকফ কাউন্সিল। তবে নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকে ইসরায়েলি পুলিশের হাতে। এই ব্যবস্থাকে ‘স্থিতাবস্থা নীতি’ হিসেবে পরিচিত।

ইসরায়েলি সুপ্রিম কোর্টও আল-আকসা চত্বরে ইহুদিদের প্রার্থনার ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে। জাতিসংঘসহ অধিকাংশ আন্তর্জাতিক সংস্থা পূর্ব জেরুজালেমকে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে এবং সেখানে ইসরায়েলের কার্যকলাপকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করে।

‘জেরুজালেম দিবস’-এর মিছিল থেকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর সদর দপ্তরেও হামলা চালানো হয়। সংস্থাটির পশ্চিম তীরের সমন্বয়ক রোলান্ড ফ্রেডরিক জানান, ইসরায়েলি বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সামনেই ইউএনআরডব্লিউএ কম্পাউন্ডে প্রবেশ করে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন পার্লামেন্ট সদস্য ইউলিয়া মালিনভস্কি, যিনি ইউএনআরডব্লিউএর ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেওয়ার মূল পরিকল্পনাকারী।

এ ছাড়া, ইসরায়েলি দখলদাররা স্থানীয় ফিলিস্তিনি ব্যবসায়ীদের ওপরও হামলা চালিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরায়েলি পতাকা হাতে কিশোররা ফিলিস্তিনি দোকানিদের ভয়ভীতি ও হয়রানি করছে। এসব ঘটনায় দুইজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঠেকাতে পুরো এলাকায় কয়েক হাজার সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন ছিল। তবুও বারবার এই ধরণের হামলা এবং নিষেধাজ্ঞা ভেঙে ধর্মীয় স্থানে প্রবেশ ইসরায়েলি সরকারের দমননীতি এবং আন্তর্জাতিক চুক্তির বরখেলাপের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছে।

এই সম্পর্কিত আরো