পেহেলগাম হামলার পর ভারতে-পাকিস্তানে বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যেই সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে দুই প্রতিবেশী দেশ। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সীমান্তে গুলি বিনিময়, যুদ্ধবিমান ধ্বংস, ড্রোন ভূপাতিত হওয়া এবং সামরিক ঘাঁটিতে হামলার মতো ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষেই অর্ধশতাধিক সামরিক ও বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারায়।
এই সংঘাতের আবহে একে অপরকে দোষারোপ করে নিজেদের অবস্থান বৈশ্বিকভাবে জোরালোভাবে তুলে ধরছে ভারত ও পাকিস্তান। উভয় দেশই আন্তর্জাতিক মহলের কাছে নিজেদের কৌশলগত সাফল্য ব্যাখ্যা করতে গঠন করেছে প্রতিনিধিদল এবং জাতিসংঘে একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
শনিবার (২৪ মে) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, জাতিসংঘে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি পারভাথানেনি হরিশ জানান, গত চার দশকে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতের ২০ হাজারের বেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। এই সহিংসতার জন্য তিনি পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদকে সরাসরি দায়ী করেন।
জাতিসংঘ অধিবেশনে পাকিস্তান সিন্ধু পানি চুক্তি বন্ধের বিষয়ে আপত্তি তুলে ধরে জানায়, ‘পানি জীবন—যুদ্ধের হাতিয়ার নয়।’ জবাবে ভারতীয় প্রতিনিধি কড়া ভাষায় পাকিস্তানের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান হলো সন্ত্রাসের বৈশ্বিক কেন্দ্র। যতক্ষণ না তারা সীমান্তপারে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়া বন্ধ করছে, ততদিন সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতই থাকবে।’
পারভাথানেনি হরিশ আরও বলেন, ‘ভারত ৬৫ বছর আগে সৎ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ উদ্দেশ্যে সিন্ধু পানি চুক্তিতে অংশ নিয়েছিল। সেই চুক্তি বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান পরবর্তীকালে ৩টি যুদ্ধ ও হাজার হাজার সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে সেই চুক্তির চেতনাকে পদদলিত করেছে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত সাড়ে ছয় দশক ধরে ভারত এই পরিস্থিতিতে ‘অসাধারণ ধৈর্য ও উদারতা’ দেখিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে নিজেদের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে ভারত স্পষ্ট করেছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি কার্যকলাপের অভিযোগ নিয়ে দিল্লি কূটনৈতিক ও বাস্তব পদক্ষেপে কোনো ধরনের ছাড় দিতে রাজি নয়। পানি নিয়ে দু-দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকলেও নরেন্দ্র মোদি আপাতত কঠিন রাস্তাতেই হাটতে চাইছেন।