বুধবার, ০৭ মে ২০২৫
বুধবার, ০৭ মে ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
আন্তর্জাতিক

ভারতের গোঁড়ামিতে শুকিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানে নদীর পানি

ভূস্বর্গ খ্যাত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে উভয় দেশই একে-অপরের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি শাস্তিমূলক পদক্ষেপও নিয়েছে।

মূলত ভয়াবহ সেই হামলার জেরে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করেছে ভারতের মোদী সরকার। এরপর ভারত পাকিস্তানের দিকে পানির প্রবাহ ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছে এবং এতে করে পাকিস্তানের চেনাব নদী অনেকটাই শুকিয়ে গেছে।

আজ মঙ্গলবার (৬ মে) প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে তথ্যটি জানিয়েছে পাক মিডিয়া দ্য ডন।

সংবাদমাধ্যমটির দাবি, ভারতের একতরফা পদক্ষেপের ফলে পাকিস্তানে চেনাব নদীর পানি প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল সোমবার (এক সপ্তাহ আগে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের পর) কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ ছাড়াই ভারত চেনাব নদী দিয়ে পাকিস্তানে পানি ছাড়ার পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয়।

পাকিস্তানের মাড়ালা হেডওয়ার্কসে সোমবার সকালে পানি প্রবাহ মাত্র তিন হাজার ১০০ কিউসেক রেকর্ড করা হয়, যেখানে রোববার এটি ছিল ৩৫ হাজার কিউসেক।

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সেচ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ভারত চেনাবের পানি প্রায় পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। তারা আমাদের প্রাপ্য পানি তাদের নিজস্ব বাঁধ ও পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোতে জমা করছে। এটি সিন্ধু পানি চুক্তির গুরুতর লঙ্ঘন।

দ্য ডন পত্রিকার হাতে আসা নথি অনুযায়ী, চেনাব অববাহিকায় ভারতের তিনটি বড় পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। যার একটি হচ্ছে— পাকাল ডুল ড্যাম। ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার এই ড্যামটির পানি ধারণ ক্ষমতা ৮৮ হাজার একরফুট এবং দৈর্ঘ্যে ১০ কিমি।

এছাড়া বাগলিহার ড্যামটি পাকাল ডুল থেকে ৮৮ কিমি দূরে। ৯০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই ড্যামটির পানি ধারণ ক্ষমতা ৩ লাখ ২১ হাজার ২ একরফুট। আর তৃতীয়টি হচ্ছে— সালাল ড্যাম। বাগলিহার থেকে ৭৮ কিমি দূরে অবস্থিত ৬৯০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই ড্যামটির পানি ধারণ ক্ষমতা ২ লাখ ২৮ হাজার একরফুট।

এই প্রকল্পগুলোতে পানি জমা করার কারণে পাকিস্তানের দিকে পানি প্রবাহ কমে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। পাকিস্তানের ওই কর্মকর্তা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি ভারত এভাবে পানি আটকে রাখে, তাহলে পাকিস্তানকে আরও ৪–৫ দিন পানি ছাড়া থাকতে হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, যদি হঠাৎ ভারত পানি ছেড়ে দেয়, তাহলে চেনাব নদীতে আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি তৈরি হবে এবং তীরবর্তী জনপদ বিপদের মুখে পড়বে।

তিনি বলেন, পাকিস্তানের মাড়ালা হেডওয়ার্কসের ক্ষমতা ১১ লাখ কিউসেক, কিন্তু ভারতের তিনটি বাঁধ মিলিয়ে পানি ধারণ ক্ষমতা ১৩ লাখ একরফুটের বেশি। তবে তিনি উল্লেখ করেন, জম্মু-তাবি এবং মুনাওয়ার-তাবি শাখা নদীগুলো থেকে পাকিস্তানের দিকে যে প্রাকৃতিক পানি আসে, সেটি ভারতের নিয়ন্ত্রণে নেই।

পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চেনাব নদী পাকিস্তানের সেচ ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই নদীর পানি থেকে ইউসিসি এবং বিএরবি খালসহ অনেক খাল পাঞ্জাবের বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে সেচ কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।

পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (ওয়াপদা) প্রকাশিত দৈনিক পানির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সোমবার চেনাবে পানি প্রবাহ ৫ হাজার ৩০০ কিউসেক, কিন্তু নদী থেকে কোনও পানি ছাড়া হয়নি। আগের দিন অর্থাৎ রোববার মাড়ালার কাছে এই পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ৬০০ কিউসেক ইনফ্লো এবং ২৫ হাজার ৪০০ কিউসেক আউটফ্লো।

এই সম্পর্কিত আরো