✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
আন্তর্জাতিক

নতুন বিদ্রোহের পথে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ

স্বৈরশাসনের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়ার পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনীর হাতে সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে নৃশংসতা, প্রতিশোধমূলক হত্যা এবং গণহারে হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।

বিশেষ করে দেশটির উপকূলীয় প্রদেশ লাতাকিয়া এবং তারতুসে শত শত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে আসাদ সমর্থকদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। এসব অঞ্চলে লুটপাট এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শিশুদেরও হত্যার শিকার হতে দেখা গেছে।

লাতাকিয়া ও বানিয়াসে নৃশংসতা

সিরিয়ার উপকূলীয় নগরী বানিয়াস এবং তার পার্শ্ববর্তী হাই আল কুসুর অঞ্চলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। এই অঞ্চলের বাসিন্দারা জানান, সড়কগুলো মৃতদেহে ভরে গেছে এবং রক্তে ভেসে গেছে। তাদের মধ্যে অনেককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এবং কিছু পরিবার প্রাণ বাঁচাতে বাড়ির ছাদে উঠে পালানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সেখানেও তাদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়াবহ এই দৃশ্য দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। এমনকি সেখানে ইন্টারনেট সংযোগও মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, মৃত্যুর খবর ফেসবুক পোস্টে দেখে লোকজন তাদের প্রিয়জনের মৃত্যুর খবর জানতেন।

আয়মানের সাক্ষাৎকার ও অভিজ্ঞতা

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আয়মান ফারেস নামক এক ব্যক্তি জানান, ২০২৩ সালের আগস্টে দুর্নীতির অভিযোগে আসাদের সমালোচনা করে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। যার পরপরই তাকে গ্রেপ্তার করে আসাদ সরকার।

গত ডিসেম্বর মাসে আসাদ ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে মুক্তি পান আয়মান। কিন্তু সম্প্রতি, হাই আল কুসুরে সড়কে চলমান অভিযানে তিনি জীবনের জন্য হুমকির মধ্যে পড়েন। যদিও তিনি বেঁচে গেছেন, তবে তার গাড়ি এবং অন্যান্য জিনিসপত্র লুট করা হয়।

আয়মান বলেন, অভিযানে অংশ নেওয়া যোদ্ধাদের মধ্যে উজবেক বা চেচেন ভাষাভাষী লোকজনও ছিল, যারা সিরীয়দের সঙ্গে মিলিত হয়ে নৃশংস কর্মকাণ্ড চালাচ্ছিল। এলাকাটিতে একাধিক পরিবারকে গুলি করে হত্যা করতে দেখেছেন আয়মান এবং বলেন, এটা ভয়াবহ ছিল।

আলাউইত সম্প্রদায় এবং নতুন বিদ্রোহের আবহ

সিরিয়ার আলাউইত সম্প্রদায়, যা শিয়া মুসলিমদের একটি উপ-সম্প্রদায়, দেশটির প্রায় ১০% জনসংখ্যা গঠিত। আসাদ এই সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। আসাদের শাসনামলে এই সম্প্রদায়ের মানুষ বেশ কিছু যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হামলার নেপথ্যে রয়েছে আসাদ বাহিনীর সাবেক সেনাদের বিদ্রোহের প্রস্তুতি। সিরিয়ার সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গিয়াথ ডাল্লাহ নতুন করে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়েছেন এবং ‘মিলিটারি কাউন্সিল ফর দ্য লিবারেশন অব সিরিয়া’ গঠনের পরিকল্পনা করেছেন।

নতুন সরকার ও সিরিয়ার অস্থিরতা

দেশটির এরকম বিদ্রোহ হওয়ার পেছনে অন্য কিছু দেখছেন কিছু বিশ্লেষক। যার মধ্যে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার কিছু পদক্ষেপ দেশটির পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

আল-শারা সিরিয়ার সেনা, পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন, যার ফলে হাজার হাজার সরকারি কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হয়েছেন। নতুন সরকারের এমন পদক্ষেপের ফলে দেশটি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে এবং জনগণের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সিরিয়ার প্রায় ৯০% মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে এবং বহু মানুষের আয় বা চাকরির কোনো ব্যবস্থা নেই।

বিদ্রোহের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ

বিশেষজ্ঞদের মতে, সিরিয়ায় বর্তমানে বিদ্রোহের জন্য একটি অত্যন্ত উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সরকারি বাহিনী এবং বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী, পাশাপাশি বেকার সেনা কর্মকর্তাদের মাঝে এক ধরনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। যা দেশের অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এছাড়াও মানুষের ন্যায্য দাবি এবং তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম সিরিয়ায় নতুন একটি বিদ্রোহের জন্ম দিতে পারে, যা ইতোমধ্যেই সারা দেশজুড়ে এক অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

সিরিয়ায় এখন চলছে এক কঠিন সময়, যেখানে নৃশংসতা, বিদ্রোহ এবং অস্থিতিশীলতার এক অন্ধকার অধ্যায় শুরু হয়েছে। দেশের অন্তর্দ্বন্দ্ব, সরকারের অক্ষমতা এবং আসাদ সমর্থকদের ক্ষোভ নতুন করে বিদ্রোহের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। সুতরাং, সিরিয়া এক নতুন বিদ্রোহের পটভূমি হয়ে উঠছে এবং এর পরিণাম কি হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এই সম্পর্কিত আরো