ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী শহর বনগাঁর চিরচেনা কর্মব্যস্ততা এখন অনেকটাই স্তিমিত। চার মাস আগে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই এই শহরের অর্থনীতির চাকা শিথিল হয়ে পড়তে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে বনগাঁয়ের এমন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাধারণত বাংলাদেশি ক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট বনগাঁর বাজার ও হোটেলগুলো এখন কার্যত ফাঁকা। সীমান্তের ওপার থেকে ক্রেতা আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
বনগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ জানান, গত কয়েক মাসে বনগাঁর ব্যবসায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ধস নেমেছে। এক সময় মুখরিত থাকা ‘তাও বাজার’ এখন নিস্তব্ধ। সেখানে তুলির দোকানের মালিক গৌতম হালদার বলেন, ‘আমার বিক্রি ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে।’
বাংলাদেশি ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যেত মোটিগঞ্জ ও তাও বাজারে। এই বাজার দুটি মূলত এখন প্রায় জনশূন্য। এর সঙ্গে সংকটে পড়েছে হোটেল খাত। গত সাত-আট দশকে বাংলাদেশের পর্যটক, চিকিৎসাসেবা প্রার্থী এবং ব্যবসায়ীদের আগমনে এখানকার হোটেল খাত ব্যাপক সমৃদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু এখন জেসোর রোডের মায়ের আশীর্বাদ গেস্ট হাউসের মতো হোটেলগুলো অনেকটাই ভুতুড়ে হয়ে পড়েছে। হোটেলটির মালিক চিত্তরঞ্জন সাহা বলেন, ‘কোভিডের বছরগুলো বাদ দিলে এমন অবস্থা আগে কখনো দেখিনি।’
বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাবে হোটেল কর্মী, অটো ও টোটো চালক, রিকশাচালক এবং কুলিদের আয়ের উৎস প্রায় বন্ধ। মায়ের সন্তোষী লজের মালিক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘১৯৪৭ সালের পর থেকে এই খাতে যা উন্নতি হয়েছিল, তা আজ হুমকির মুখে।’
কিছু বাংলাদেশি পর্যটক এখনো আসছেন। তবে তাঁরাও ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত। যশোর থেকে আসা রেহানা খাতুন বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন যে ভবিষ্যতে আর আসতে পারব কি না জানি না।’
বনগাঁর ফাঁকা রাস্তাগুলো এবং জনমানবহীন বাজার এ শহরের অর্থনীতির অচলাবস্থার স্পষ্ট প্রমাণ। সীমান্তে উত্তেজনা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে এই সংকট আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।