অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অবস্থানে বিপাকে পড়েছে খণ্ডকালীন কাজের সঙ্গে যুক্ত বিদেশি শিক্ষার্থীরা। কেউ নিচ্ছেন ছুটি, কেউবা ছাড়ছেন স্থায়ীভাবে কাজ।
এফ-ওয়ান ভিসা নিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে থাকাকালীন সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি রয়েছে আমেরিকায়।
ক্যাম্পাসভিত্তিক কাজ পাওয়া যেহেতু কঠিন, সেক্ষেত্রে তারা বাইরের কাজের উপর বেশি নির্ভরশীল, যা সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী অবৈধ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা মূলত গ্যাস স্টেশন, রেস্তোরাঁ, খুচরা বিক্রির দোকানে খণ্ডকালীন কাজ করে দৈনন্দিন খরচ মেটান।
দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনই ডনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে সই করেছেন একাধিক নির্বাহী আদেশে। এতে মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ যেমন কঠিন হচ্ছে, তেমনি অবৈধদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান নিয়ে দেখা দিয়েছে ভীতি। যার প্রত্যক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহেও।
ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জানান, এতদিন তিনি একটি গ্যাস স্টেশনে সপ্তাহে তিন দিন কাজ করে মাসে ১২০০ ডলারের মতো আয় করেছেন। তবে ২০ তারিখের পর থেকে তিনি আর কাজে যাচ্ছেন না।
প্রতিষ্ঠানটির ভারতীয় মালিককে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তিনি কাজে আসবেন না।
তবে এভাবে কতদিন কাজ না করে চালিয়ে যেতে পারবেন তা নিয়ে শঙ্কিত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ওই ছাত্র।
একটি গণমাধ্যম প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, “শুধু আমি নই, অনেকেই কাজ থেকে ছুটি বা স্থায়ীভাবে ছেড়ে দিয়েছেন। আমার এক বন্ধু আরেকজনের আইডি দিয়ে ফুড ডেলিভারির কাজ করতো, সেটিও সে বন্ধ করে দিয়েছে।”
ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতির জেরে শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই আর্থিক অনটনে পড়ার আশঙ্কা করছেন। কারণ কাজ করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে পড়লে জারিমানা অথবা দেশে ফিরে যেতে হতে পারে।
এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন দেশজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে। বেশ কিছু লোককে বিতাড়নও করেছে বলে জানিয়েছেন নিউ ইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করে ২০২৩ সালে স্নাতকোত্তর করতে যাওয়া এই শিক্ষার্থী বলেন, “দিনে ৬ ঘণ্টা কাজ করে আমি সেখান থেকে ঘণ্টায় ১০ ডলার পেতাম। যা দিয়ে হেসেখেলে ভালোভাবে কেটে যেত। কিন্তু, গত সপ্তাহে আমি সেই পার্ট টাইম জব ছেড়ে দিয়েছি। চারদিকে শুনছি ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। পুলিশ এসে সব জায়গায় খোঁজ নিচ্ছে।”
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে টিউশন ফি হিসেবে তিনি প্রায় ৪০ হাজার ডলার ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছেন। সামনে আবার সেমিস্টার ফি দিতে হবে তার।
টেনেসি অঙ্গরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী শিক্ষার্থী জানান, তার কাজের স্থানে সাদা পোশাকে পুলিশ ঘোরাফেরা করে।
“আমার অন্য বন্ধুরা এবং আমি ঠিক করেছি যে এখন কিছুদিন কাজ বন্ধ রাখব। যদিও সেটা খুবই কঠিন, তবুও আমেরিকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার থেকে তো ভালো। যদি আমাদের স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল করে দেয় তাহলে তো আরও বিপদে পড়ব, তাই না!”