নিজের বিদায়ী ভাষণে আমেরিকানদের সতর্ক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ডনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে আমেরিকায় ‘বিপজ্জনক’ অলিগার্কির (অভিজাতগোষ্ঠী) বিকাশের বিরুদ্ধে মার্কিনবাসীকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কেননা তারা দেশের গণতন্ত্র এবং অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে বলে মনে করেন বাইডেন। আগামী ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেয়ার আগে বুধবার জাতির উদ্দেশে বিদায়ী ভাষণে এসব মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। তার বিদায়ের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহন করবেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে ২০২০ সালে ট্রাম্পকে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন বাইডেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ইন্ডিয়া টুডে।
এতে বলা হয়, স্থানীয় সময় বুধবার রাতে ওভাল অফিস থেকে আমেরিকানদের উদ্দেশে বিদায়ী ভাষণ দেন বাইডেন। ওভাল অফিস থেকে এবার পঞ্চমবারের মতো ভাষণ দিলেন তিনি। এর আগে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ভাষণ দিয়েছিলেন মার্কিন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। এবারই হয়তবা প্রেসিডেন্ট হিসেবে জীবনের সর্বশেষ ভাষণ দিয়েছেন বাইডেন। আর এ ভাষণেই আমেরিকানদের সতর্ক করেছেন তিনি।
জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ৮২ বছর বয়সী বাইডেন বলেছেন, আজ আমেরিকায় চরম সম্পদ, ক্ষমতা ও প্রভাবের একটি অলিগার্কি বিকশিত হচ্ছে যা আমাদের সমগ্র গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
আজ, আমেরিকায় চরম সম্পদ, ক্ষমতা এবং প্রভাবের এক অভিজাততন্ত্র রূপ নিচ্ছে যা আমাদের সমগ্র গণতন্ত্র, আমাদের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতাকে সত্যিই হুমকির মুখে ফেলেছে এবং সকলের এগিয়ে যাওয়ার জন্য ন্যায্য সুযোগ তৈরি করেছে।
বাইডেন আরও বলেন, আমেরিকার মূল ধারণা হচ্ছে- সকলেরই ন্যায্য সুযোগ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কঠোর পরিশ্রম এবং প্রতিভা একজনকে যতদূর নিয়ে যেতে পারে। আমরা কখনই এই অপরিহার্য সত্য থেকে বিচ্যুত হতে পারবো না।
১৯৬১ সালে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করার সময় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট আইজেনহাওয়ারস সামরিক-শিল্প সম্পর্কে যে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন, তার প্রতি ইঙ্গিত করে বাইডেন বলেন, আমি একটি প্রযুক্তি-শিল্প কমপ্লেক্সের সম্ভাব্য উত্থান সম্পর্কে সমানভাবে উদ্বিগ্ন। কেননা তা আমাদের দেশের জন্য প্রকৃতপক্ষে বিপদ ডেকে আনতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ভুল তথ্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যের নীচে চাপা পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাইডেন। তিনি বলেছেন, আমেরিকানরা ভুল তথ্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যের তুষারধ্বসের নিচে চাপা পড়ছে, যা ক্ষমতার অপব্যবহারের ন্যায্যতা দিচ্ছে। এর মাধ্যমে গণমাধ্যম তার স্বাধীনতা হারাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। বাইডেন বলেন, ক্ষমতা লাভের জন্য বলা মিথ্যা দিয়ে সত্যকে ঢেকে ফেলা হচ্ছে। ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে সন্তান, পরিবার এবং গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন সংঘটিত অপরাধের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টদের যেন শাস্তির আওতায় আনা হয়, সেজন্য সাংবিধানিক সংশোধনীরও আহ্বান জানিয়েছেন বাইডেন।
তিনি বলেন, আমাদের সংবিধান সংশোধন করতে হবে। যেন এটা স্পষ্ট করে বলা যায় যে, দেশের কোনো প্রেসিডেন্টই ক্ষমতায় থাকাকালীন অপরাধের শাস্তি থেকে মুক্ত নন। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমাহীন নয়। তিনি নিরঙ্কুশ নন এবং তা হওয়া উচিতও নয় বলে ভাষণে উল্লেখ করেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী ওই প্রেসিডেন্ট।