রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দিয়েছেন, ভারত চাইলে তাকে অব্যাহতভাবে জ্বালানি তেল সরবরাহ করবে মস্কো। শুক্রবার নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানান পুতিন। তিনি বলেন, মোদির সঙ্গে তার আলোচনায় ‘গঠনমূলক, বন্ধুত্বপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশ’ ছিল এবং দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে নিয়মিত ফোনালাপও চলমান রয়েছে।
পুতিন জানান, এবারের বৈঠকে বাণিজ্য, জ্বালানি ও কৃষিসহ বিভিন্ন খাতকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, যেগুলোকে তিনি ‘আকর্ষণীয় ও ফলপ্রসূ’ বলে উল্লেখ করেন। দুই দেশের লেনদেনে নিজস্ব মুদ্রার ব্যবহার বাড়ানোর অগ্রগতিতে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি ভারতের বৃহত্তম পারমাণবিক প্রকল্প নির্মাণে রাশিয়ার সহযোগিতা অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন।
জ্বালানি সরবরাহ প্রসঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, “ভারতের জ্বালানি চাহিদা পূরণে আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ দিতে প্রস্তুত।” তবে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর চাপ বজায় রেখেছে। ওয়াশিংটন দাবি করে আসছে, রুশ জ্বালানি কেনা সরাসরি মস্কোর ইউক্রেন যুদ্ধকে সহায়তা করছে। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।
প্রসঙ্গত, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের সরকারি সফরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছান। পালাম বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাতেই দুই নেতা নৈশভোজে মিলিত হন। আর শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় তাদের দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক।
শীর্ষ বৈঠকের আগে রাষ্ট্রপতি ভবনে পুতিনকে দেওয়া হয় আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা। পরে তিনি দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন এবং সেখানেই অবস্থান করেন।
২০২১ সালের পর প্রথমবারের মতো ভারতে সফরে এলেন পুতিন। গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মস্কোয় গিয়ে বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। বর্তমান সময়টি দুই দেশের জন্যই বেশ চ্যালেঞ্জের। পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন চাপের মুখে আছেন।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ও রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে নানা নিষেধাজ্ঞা— সব মিলিয়ে ভারতের জন্যও বছরটি কঠিন যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে পুতিন দিল্লি সফরে এসেছেন বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।