‘স্নেকহেড’ তথা শোল, টাকি ও গজার মাছ বাংলাদেশে সুপরিচিত হলেও শ্রীলঙ্কায় এরা একেবারেই নতুন। এই প্রজাতির মাছ এখন দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দেদুরু ওয়া জলাধারের স্থানীয় জেলে ও কৃষক পরিবারগুলোর জীবিকায় বড় ধরনের হুমকি তৈরি করেছে। তবে সংকটের মাঝেও নতুন সম্ভাবনা খুঁজছেন স্থানীয়রা।
রোববার (১৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে—গত দুই বছরে দেদুরু ওয়া জলাধারের জেলেরা লক্ষ্য করেছেন, তাঁদের জালে আগের মতো আর স্থানীয় মাছ বা চিংড়ি ধরা পড়ছে না। বরং অচেনা স্নেকহেড মাছ বিপুল সংখ্যায় দেখা দিতে শুরু করেছে।
এই মাছ এর আগে শ্রীলঙ্কায় কখনো ছিল না। কর্তৃপক্ষের ধারণা—থাইল্যান্ড বা ইন্দোনেশিয়া থেকে শখের অ্যাকোরিয়ামের জন্য আমদানি করা এসব মাছ যখন বড় হয়ে যায়, তখন মালিকেরা সেগুলো জলাধারে ছেড়ে দেন। সেখান থেকেই শুরু হয় অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার। দ্রুত বংশবৃদ্ধির কারণে এসব মাছ স্থানীয় মাছ ও চিংড়ি প্রজাতিগুলোকে হুমকির মুখে ফেলছে।
গবেষক ড. কেলুম উইজনায়েকে জানান, শ্রীলঙ্কার জলাশয়গুলোতে স্নেকহেড মাছগুলোকে খেয়ে ফেলবে বা বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করবে এমন কোনো প্রাকৃতিক শিকারি নেই। শিকারি না থাকা আর স্থানীয় মাছগুলোকে খাদ্য হিসেবে পেয়ে স্নেকহেড মাছ দেদুরু ওয়া জলাধারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠেছে। এরা পানির ওপরে উঠে অক্সিজেন নিতে পারে এবং খুব অল্প পানিতেও টিকে থাকে। তাদের ধারালো দাঁত, শক্ত চোয়াল এবং ব্যাপক খাওয়ার প্রবণতা স্থানীয় জীববৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। স্থানীয় মাছ যেখানে সাধারণত এক কেজির কম হয়, সেখানে সাত কেজি ওজন পর্যন্ত স্নেকহেড ধরা পড়েছে।
জেলে রঞ্জিত কুমারা বলেন, ‘২০১৬ সালে যখন মাছ ধরা শুরু করি, তখন নানা জাতের চিংড়ি ও মূল্যবান মাছ পাওয়া যেত। এখন সেগুলো প্রায় বিরল। স্নেকহেড জালে ধরা যায় না—শুধু অ্যাংলিংয়ের (ছিপ দিয়ে) মাধ্যমেই ধরা সম্ভব।’
শোল মাছ খাওয়া শিখে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার স্থানীয় মানুষেরা। দ্য ইনডিপেনডেন্ট
শোল মাছ খাওয়া শিখে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার স্থানীয় মানুষেরা। দ্য ইনডিপেনডেন্ট
সংকট মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ ছিপ দিয়ে মাছ ধরা প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেছিল। তারপরও স্নেকহেড নিয়ন্ত্রণে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তবে স্থানীয়রা আশা হারাতে চান না। রঞ্জিত কুমারা প্রস্তাব দিয়েছেন—সরকার যদি অ্যাংলিং টুরিজম চালু করে, তবে একদিকে স্নেকহেড নিয়ন্ত্রণ হবে, অন্যদিকে জেলে ও কৃষক পরিবারগুলোর জন্য নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি হবে।
এদিকে স্থানীয় জেলে সুজিওয়া করিয়াওয়াসাম স্নেকহেড মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করছেন, যা বাজারে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘চাহিদা বাড়ছে। যত বেশি স্নেকহেড ধরা পড়বে, ততই এর বিস্তার কমবে।’
সংকটের মধ্যেও এভাবেই নতুন সম্ভাবনার পথে এগোতে চাইছে দেদুরু ওয়া গ্রামের মানুষ।