সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
আন্তর্জাতিক

ভারতে এসে কেনিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাইলা ওডিঙ্গার মৃত্যু

ভারতের কেরালায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কেনিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাইলা ওডিঙ্গা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। স্থানীয় পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আজ বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

দক্ষিণ ভারতের কেরালার দেবমাথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছে, চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থানকালে ওডিঙ্গা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

ওডিঙ্গা কেনিয়ার রাজনীতিতে এক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁর মৃত্যু দেশটির রাজনৈতিক বিরোধী শিবিরে বড় শূন্যতা তৈরি করবে, বিশেষত ২০২৭ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে।

কেরালার এরনাকুলাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃষ্ণন এম এপিকে বলেন, ‘সকালে হাঁটার সময় ওডিঙ্গা তাঁর বোন, মেয়ে, ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং ভারতীয় ও কেনিয়ান নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছিলেন। হঠাৎই তিনি পড়ে যান। পরে তাঁকে দ্রুত কাছের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়, তবে সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’

ওডিঙ্গার কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। ভারতের স্থানীয় মালয়ালাম সংবাদপত্র ‘মাতৃভূমি’ জানিয়েছে, কেরালার কোচি শহরে ওডিঙ্গা চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এদিকে ওডিঙ্গার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো রাজধানী নাইরোবির কারেন এলাকায় ওডিঙ্গার বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শত শত সমর্থক ওডিঙ্গার বাড়িতে ভিড় করেন। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

কেনিয়ার রাজনীতিতে ওডিঙ্গা ছিলেন ‘একজন রহস্যময় ব্যক্তিত্ব’। ১৯৪৫ সালে দেশের স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রীর ছেলে হিসেবে জন্ম নেওয়া ওডিঙ্গা পরে নিজেকে এক ‘বিপ্লবী নেতা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।

লুয়ো (Luo) জাতিগোষ্ঠীর এই রাজনীতিক শৈশব থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তরুণ বয়সে তিনি ছিলেন বামপন্থী ও জনমানুষের নেতা হিসেবে পরিচিত। কিউবার কমিউনিস্ট নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজের ছেলের নাম রেখেছিলেন ফিদেল।

রাজনৈতিক বিভিন্ন আন্দোলনের কারণে জীবনের বড় একটা সময় কারাগার বা নির্বাসনে কাটিয়েছেন ওডিঙ্গা। ১৯৮২ সালে প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল আরাপ মইয়ের সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানচেষ্টার অভিযোগে তাঁকে প্রথমবার গ্রেপ্তার করা হয়। তখন তিনি কারাবন্দী অবস্থায় নির্যাতনের শিকার হন।

১৯৯২ সালে মুক্তি পেয়ে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন ওডিঙ্গা। এরপর ১৯৯৭, ২০০৭, ২০১৩, ২০১৭ ও ২০২২ সালে টানা পাঁচবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তবে প্রতিবারই পরাজিত হন। শেষ চারটি নির্বাচনে তিনি কারচুপির অভিযোগ তোলেন।

২০০৭ সালের নির্বাচনের পর কেনিয়ায় যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, তা ছিল স্বাধীনতার পর দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংঘাত। তাতে প্রায় ১ হাজার ৩০০ মানুষ নিহত হন এবং লক্ষাধিক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন।

এরপর ২০১৭ সালের নির্বাচনেও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। সে সময় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট প্রথম দফার ভোট বাতিল ঘোষণা করেন। তবে পুনর্নির্বাচনও বর্জন করেন ওডিঙ্গা।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ওডিঙ্গা ছিলেন কেনিয়ার দুই বড় সংস্কারের নেপথ্যের নায়ক।। ১৯৯১ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালুর আন্দোলন এবং ২০১০ সালের নতুন সংবিধান প্রণয়ন।

তাঁর সমর্থকেরা তাঁকে ভালোবেসে ‘বাবা’ (সোয়াহিলি ভাষায় ‘পিতা’) বলে ডাকতেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে আপস ও কখনো জাতিগত বিভাজনকে কাজে লাগানোর অভিযোগ থাকলেও তাঁর জনপ্রিয়তা টিকে ছিল অটুট। এ কারণেই লুয়ো ভাষায় তাঁর আরেক নাম ছিল ‘আগওয়াম্বো’, অর্থাৎ ‘রহস্যময় ব্যক্তি’।

চলতি বছরের মার্চে তিনি প্রেসিডেন্ট রুটোর সঙ্গে একটি রাজনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির পর তাঁর দল আজিমিও লা উমোজা সরকারের নীতিনির্ধারণে অংশ নেয় এবং মন্ত্রিসভায় সদস্য মনোনীত করে।

কেনিয়ার সাবেক প্রধান বিচারপতি ও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডেভিড মারাগা ওডিঙ্গার মৃত্যুকে ‘গভীর ক্ষতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ডেভিড মারাগা এক্সে লিখেছেন, ‘ওডিঙ্গা ছিলেন দেশপ্রেমিক, আফ্রিকান ঐক্যের প্রবক্তা, গণতন্ত্রের রক্ষক এবং এমন এক নেতা, যিনি কেনিয়া ও আফ্রিকার গণতন্ত্রে গভীর অবদান রেখেছেন। কেনিয়া হারিয়েছে এক মহান নেতা, আফ্রিকা হারিয়েছে শান্তি ও উন্নয়নের এক দৃঢ় কণ্ঠ।’

ওডিঙ্গার মৃত্যুতে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদও শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘ইথিওপিয়া সরকারের পক্ষ থেকে কেনিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাইলা ওডিঙ্গার মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। মহান এ নেতার আত্মার শান্তি কামনা করি।’

এই সম্পর্কিত আরো