এখন প্রায় পুরো পৃথিবীই যেন এক বিশাল ‘ওয়াই-ফাই জোন’। বাসা, অফিস, ক্যাফে, এমনকি রাস্তার ধারে ছোট দোকানেও চলছে তারবিহীন ইন্টারনেট। মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, স্মার্ট টিভি—সবই যুক্ত থাকে ওয়াই-ফাইয়ের নেটওয়ার্কে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—এই অদৃশ্য ওয়াই-ফাই রেডিয়েশন কি আমাদের শরীরের ক্ষতি করছে?
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেল কলেজ অব উইসকনসিনের রেডিয়েশন বিশেষজ্ঞ ড. জন মোল্ডার জানান, ওয়াই-ফাই রেডিয়েশন নিয়ে গবেষণা বহু বছর ধরেই চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো শক্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে, এটি মানুষের শরীরের জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ হয়।
ওয়াই-ফাই এবং মোবাইল ফোন উভয়ই তথ্য আদান–প্রদানে রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে। উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির রেডিয়েশন যেমন এক্স-রে বা গামা রশ্মি শরীরের ক্ষতি করতে পারে, কিন্তু ওয়াই-ফাইয়ের রেডিয়েশন অনেক নিম্নমাত্রার—যা সাধারণত নিরাপদ বলে মনে করেন অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ।
রাউটার থেকে কতটা রেডিয়েশন ছড়ায়
ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার অধ্যাপক ড. কেনেথ ফস্টার জানান, “একটি ওয়াই-ফাই রাউটার সারাক্ষণ রেডিয়েশন ছড়ায় না। এটি অধিকাংশ সময় ‘অপেক্ষমাণ অবস্থায়’ থাকে, শুধুমাত্র তথ্য পাঠানোর সময় সক্রিয় হয়—তা-ও মোট সময়ের মাত্র ০.১ শতাংশ।”
তিনি বলেন, “রাউটার থেকে দূরে থাকলে শরীরে রেডিয়েশনের প্রভাব আরও কমে যায়।”
তবে সবাই যে একই মত পোষণ করেন, তা নয়। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি বার্কলের অধ্যাপক জোয়েল মোস্কোভিটজ মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে অল্পমাত্রার রেডিয়েশনও শরীরের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু প্রাণীভিত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই রেডিয়েশন স্নায়ুতন্ত্র, প্রজনন ক্ষমতা এবং ক্যানসারের ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং আন্তর্জাতিক ক্যানসার গবেষণা সংস্থা (IARC) মোবাইল ফোনকে ‘সম্ভাব্য ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই যে ওয়াই-ফাই বা মোবাইল রেডিয়েশন সরাসরি ক্যানসার সৃষ্টি করে।
তাহলে কীভাবে সচেতন থাকবেন
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝুঁকি কমাতে কয়েকটি সাধারণ অভ্যাস অনুসরণ করাই যথেষ্ট—
রাউটার ও মোবাইল ফোন শরীর থেকে দূরে রাখুন। ঘুমানোর সময় ওয়াই-ফাই বন্ধ রাখুন। শিশুদের দীর্ঘ সময় ওয়াই-ফাই যুক্ত ডিভাইস ব্যবহারে সীমিত রাখুন। প্রয়োজন না হলে ডিভাইস ‘এয়ারপ্লেন মোডে’ রাখুন।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত ওয়াই-ফাই রেডিয়েশনের মাত্রা সাধারণত নিরাপদ বলে বিবেচিত। তবুও বিজ্ঞানীরা এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—ভয় নয়, সচেতন থাকুন; প্রযুক্তি ব্যবহার করুন দায়িত্বশীলভাবে।