শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
অপরাধ

টিউলিপকে নিয়ে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য

মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক।তিনি বাংলাদেশের নাগরিক নন বলে যে তথ্য দিয়েছিলেন সেটি সঠিক নয়। তার ট্যাক্স ফাইল ও ব্যাংক হিসাবের সন্ধান মিলেছে। তার বিষয়ে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট এসব বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। 

টিউলিপ সিদ্দিকির পুরো নাম টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। তিনি একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি ট্রেজারির অর্থনৈতিক সেক্রেটারি এবং সিটি মন্ত্রী হিসাবে ২০২৪ সালের ৯ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।দীর্ঘদিন ধরে তিনি যুক্তরাজ্যেই বসবাস করে আসছেন।

টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে ট্যাক্স ফাইল ওপেন করার সময় ‘নিবাসী’ কলাম পূরণ করেন। অর্থাৎ নিবাসী হতে হলে তাকে বছরে অন্তত ১৮২ দিন বাংলাদেশে অবস্থান করতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। তিনি মাঝেমধ্যে কয়েকদিনের জন্য ঢাকায় তার খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সময় কাটাতে এসেছেন মাত্র। এর বেশি তিনি মাসের পর মাস বাংলাদেশে অবস্থান করেননি। এক্ষেত্রেও তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন।

সূত্র জানায়, টিউলিপ সিদ্দিক ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া শুরু করেন। এরপর ২০১৮-১৯ করবর্ষ পর্যন্ত তার রিটার্ন জমার প্রমাণ মিলেছে। ট্র্যাক্স ফাইল ওপেন করার সময় তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে ধানমন্ডির ঠিকানা ব্যবহার করেন। যেখানে বাসা নম্বর ৫৪ এবং রোড উল্লেখ করা হয় ৫নং। এছাড়া ২০১৪-১৫ করবর্ষে ঠিকানা পরিবর্তন করে দেখানো হয় বাসা নং-১৩, রোড নং-৭, গুলশান-১। রিটার্ন দাখিলের ফরমে যথারীতি তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরও (এনআইডি) উল্লেখ রয়েছে। 

এদিকে সোনালী ব্যাংকের গণভবন শাখায় তিনি যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা হিসাব খোলেন, সেখানেও এই ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। ব্যাংক হিসাবটি ওপেন করা হয় ২০০৭ সালের ১ জুলাই। এরপর ওই সময় ব্যাংকে টাকার স্থিতি ছিল ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৪ টাকা। সবশেষ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবে ব্যালেন্স বা স্থিতি হিসাবে রয়েছে ৯০ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪ টাকা। 

সূত্র জানায়, টিউলিপের ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া হয়েছে কিনা, সেটি অনুসন্ধান করে দেখছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে এখন বাংলাদেশে থাকা টিউলিপ সিদ্দিকির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছাড়াও টানা কয়েক বছর রিটার্ন দাখিলের তথ্য মিলেছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে করযোগ্য কত টাকা তিনি পরিশোধ করেননি। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনও তার ট্যাক্স ফাইল স্টাডি করে ফাইলে থাকা অর্থের আয়-ব্যয়ের উৎস ও খাতগুলো তদন্ত করছে।

যুক্তরাজ্যের সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ এখন বাংলাদেশে বিচারের মুখোমুখি। মা-খালাদের সঙ্গে মিলে দুর্নীতি ও অভিয়মের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। খালা, মা, দুই ভাই-বোনসহ টিউলিপের বিরুদ্ধে ঢাকার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে বেআইনিভাবে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ আনে দুর্নীতি দমন কমিশন। সংস্থাটির আইনজীবীরা দাবি করেন, প্লট পাওয়ার যোগ্যতার নিয়ম এড়াতে রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। 

এর আগে ১৩ আগস্ট দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দুদকের আইনজীবী বলেন, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) টিউলিপ সিদ্দিকির বাংলাদেশি নাগরিকত্ব আছে। যদিও টিউলিপ বলে আসছেন, তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেই।

টিউলিপ বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে যে কোনো অপরাধের বিচার চলতে কোনো বাধা হবে না। এছাড়া তিনি নিশ্চয় ব্রিটিশ ট্যাক্স ফাইলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ও ট্রাক্স ফাইল সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেননি। এজন্য এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করার দায়ে তার বিরুদ্ধে ব্রিটেনের আইনেও মামলা হতে পারে।

বিধিবহির্ভূতভাবে সরকারি প্লট নেওয়ার অভিযোগে আগস্টের প্রথমার্ধে টিউলিপ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে করা মামলার শুনানির ফাঁকে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদ যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এই এমপি একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হিসাবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছেন এবং ভোটার হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছেন। টিউলিপ সিদ্দিকির খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। ওই সময় টিউলিপের মা শেখ রেহানাও তার সঙ্গে পালিয়ে যান।

এই সম্পর্কিত আরো