বালু ও পাথরখেকো সিন্ডিকেটের হাত থেকে পরিত্রাণ চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উপজেলার সালিস ব্যক্তিত্ব ও ব্যবসায়ী মৃত সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী ছালাতুন নেছা। ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নির্বিচারে পাথর ও বালু লুটের অভিযোগ করেছেন তিনি।
সোমবার (১২ মে) বেলা ২টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে ছালাতুন নেছার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেলাল আহমদ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ছালাতুন নেছা স্বামী মারা যাওয়ার পর সহায়-সম্পত্তি নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ-কালাইরাগ কোয়ারিতে থাকা সম্পত্তি নিয়ে উপজেলার কুখ্যাত বালু-পাথর সিন্ডিকেটের হোতা সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহার ও তার লোকজনের রোষানলে পড়েছে তার পরিবার। তার সন্তানদের মারধর করাসহ মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। আর এই সুযোগে ওই সিন্ডিকেট ছালাতুন নেছার সম্পত্তি থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার পাথর ও বালু লুট করে নিয়ে যায়। তিনি এখন বিচার পাচ্ছেন না। বরং তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারিতে ৭-৮ মাস ধরে বালু ও পাথর লুট করা হচ্ছে। আর এই লুটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুবদল নেতা বাহার ও আজিদ সিন্ডিকেট। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শওকত আলী বাবুল। সঙ্গে রয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান। তাদের অবাধ লুটপাটের কারণে এবার ভোলাগঞ্জ কোয়ারি থেকে শতকোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
আরও বলা হয়, ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে কালাইরাগ সীমান্তে ভারত থেকে এলসির পাথর আমদানি করতে একটি ল্যান্ডপোর্ট চালু করে সরকার। এই পোর্টের জমি ও সড়ক নির্মাণে ছালাতুন নেছার পারিবারিক সম্পত্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে এই জমি দেওয়া হয়। তাদের বাড়ি কালিবাড়ি গ্রামে। গ্রামের পাশেই ভোলাগঞ্জ-কালাইরাগ কোয়ারি। ওই কোয়ারিতে বিভিন্ন দাগে তাদের ১৫-১৬ একর ভূমি রয়েছে। এসব ভূমির মধ্যে বাড়ির পশ্চিম অংশে ৪-৫ একর ভূমি লিজ সূত্রে তাদের নিজের।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ৮ এপ্রিল পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা বাহার, তার ভাই গিয়াস ও নাজিম উদ্দিনসহ পাথরখেকো সিন্ডিকেটের কয়েকজন সশস্ত্র সদস্য ছালাতুন নেছাদের ভূমি থেকে পাথর লুট শুরু করে। এ সময় বাড়িতে থাকা তার ছেলে বিলাল, হেলাল ও ইউনুছ মিয়া সেখানে গিয়ে বাধা প্রদান করেন। এক পর্যায়ে বাহারের নেতৃত্বে তার ভাই ও সিন্ডিকেট সদস্যরা লাঠিসোঁটা নিয়ে তার ছেলেদের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে এলাকার লোকজন এগিয়ে গিয়ে ছেলেদের উদ্ধার করেন। আহত তিন ছেলেকে নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দিকে রওয়ানা হলে সন্ধ্যায় লাখাল সেতুর কাছে যাওয়ামাত্র ফের বাহার, গিয়াস, নাজিম, জুবায়ের, আজিদ, হেকিম মিয়া ও হাবিবসহ কয়েকজন তার ছেলেদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এ সময় তারা লাঠিসোঁটা দিয়ে তিন ছেলেকে বেদম মারধর করেন। কিন্তু পুলিশ আহত তিন ছেলে বিলাল, হেলাল ও ইউনূসকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে না পাঠিয়ে থানায় নিয়ে রাখে। অসুস্থ তিন ছেলেকে চিকিৎসা প্রদানের জন্য ওসি উজায়েরকে বারবার অনুরোধ করার পরেও তিনি কালক্ষেপন করেন। পরে মধ্যরাতের দিকে পাথরখেকো চক্রের প্রধান বাহার ও তার লুটপাটের সহযোগী বিএনপি নেতা শওকত আলী বাবুলের নির্দেশে ওসি উজায়ের আহত তিন ছেলের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করে গ্রেপ্তার দেখায়। মামলায় বাদি করা হয় বাহারের ভাই নাজিমকে।
আরও বলা হয়, মামলা দিয়ে ছালাতুন নেছার তিন ছেলেকে গ্রেপ্তারের পর থেকে তাদের বাড়ির পাশের ভূমিতে যন্ত্র ব্যবহার করে অবাধে বালু ও পাথর লুট শুরু করে ওই সিন্ডিকেট। এখনও তারা লুটপাট চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২ কোটি টাকার বালু ও পাথর লুট করে নিয়েছে তারা। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে থানায় একাধিকবার অভিযোগ দিলেও বিএনপি নেতা বাবুল ও যুবদল নেতা বাহারের নির্দেশে কোনো মামলাই কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রহণ করেনি। পরে ছালাতুন নেছা বাদী হয়ে গত ২০ এপ্রিল সিলেটের আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তদন্তের জন্য ডিবি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ছালাতুন নেছা অভিযোগ করেন, ভোলাগঞ্জের কোয়ারিতে বাহার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্যেই অস্ত্র নিয়ে বালু ও পাথর লুট করছে। তাদের ভয়ে অনেক জায়গার মালিক মুখ খুলছেন না। ওসি নিজে তাদের পক্ষে থাকায় কেউ অভিযোগ করার সাহসও পাচ্ছেন না। বালু ও পাথর লুটের ফলে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে পুরো এলাকা। অনেক মানুষের ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। অনেকের ভূমি দখল করে পাথর লুট করার কারণে তাদের বসতঘরও বিলীন হওয়ার পথে।
এমন পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচার চেয়েছেন ছালাতুন নেছা। সিলেটের ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তার দাবি- যদি তদন্তপূর্বক তার অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণ হয়, তাহলে চিহ্নিত পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক। সেই সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনানের অপসারণ দাবি করেন তিনি।