উজানের ঢল আর ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে পানি বাড়তে শুরু করেছে তিস্তা নদীতে। পানি বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধায় নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তিস্তার চরের বেশকিছু ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে। ডুবে গেছে ফসলি জমি। কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে চরের মানুষ ও কৃষকদের। আগাম বন্যা ও ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে নদীপারের মানুষের মাঝে। ঈদের আগে হঠাৎ এমন পানি বৃদ্ধিতে উদ্বেগ বেড়েছে বেশি। এদিকে এরই মধ্যে ডালিয়া ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাটই খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
শনিবার সকাল ৬টায় কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার ও সকাল ৯টায় ২৮ দশমিক ৫৭ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে শনিবার সকাল ৬টায় ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার ও সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটার।
তিস্তা নদীর তীরবর্তী রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারি, মহিপুর, চর ইচলী, গজঘন্টা, মর্ণেয়া, তালপট্রি, ছালাপাক, কোলকোন্দ, পাইকানসহ কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ, বালাপাড়া ও টেপামধুপুর এবং পীরগাছার ছাওলা, তাম্বুলপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নদীতে পানি বৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। এছাড়া লালমনিরহাটের খুনিয়াগাছ, কালিমাটি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোকা, পলাশী, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ ও পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ ও নাজিমখান, উলিপুর উপজেলা এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার নদীতীরবর্তী চরের বাদামক্ষেত, শাকসবজি, ধান বীজতলা, মিষ্টিকুমড়াসহ বিভিন্ন ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করেছে। হাতিবান্দা উপজেলার দোয়ানী গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম ও শরিফুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, ভারতে বন্যা হয়েছে। ওই পানি যদি আমাদের বাংলাদেশের দিকে ছাড়ে তখন আমাদের এলাকায় বন্যা দেখা দেবে। এতে অনেক ক্ষতি হবে। যখন পানি চাই তখন পাই না, বর্ষাকালে আমরা পানি দিয়ে কী করব। গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারি ও মর্ণেয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, চরে বাদাম, কুমড়া, শাকসবজিসহ বেশ কিছু সবজি আছে। পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে খেত ডুবে ফসলের ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
কাউনিয়ার বালাপাড়া গ্রামের সুখমন বিবি জানান, এক মাস থেকে ভাঙনের ফলে আবাদি জমি বিলীন হয়েছে ৩ বিঘা। এখন পানি বাড়তে শুরু করেছে। তিস্তাপারের গ্রামগুলোর পাশাপাশি যারা চরাঞ্চলে বসবাস করেন, পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক বাড়ছে বাসিন্দাদের মধ্যে।
একই উপজেলার টেপামধুপুর চরগনাই এলাকার বাসিন্দা আলেফ উদ্দিন জানান, ‘ভোর থাকি নদীতে পানি বাড়ছে। এখন ভয় লাগছে কখন যে বাড়িতে পানি প্রবেশ করে। ঈদের আগে বন্যা হলে বিপদ আরও বাড়বে। পার্শ্ববর্তী বুড়িরহাট এলাকার মমিনুর রহমান জানান, হঠাৎ পানি বাড়ার ফলে গবাদি পশুপাখি নিয়েও বিপাকে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কাজকামও বন্ধ হয়ে গেছে। ঈদে কী যে হবে বুঝতে পারছি না। সার্বিক বিষয়ে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, উজানের ঢল আর গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে গত বৃহস্পতিবার বিকলি থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তায় পানি বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি গেটই খুলে রাখা হয়েছে। শুক্রবার বিকালের দিকে ডালিয়া পয়েন্টে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে নিম্নাঞ্চলের দিকে রংপুর জেলার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই নিম্নাঞ্চলের নদীপারের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তবে বন্যার আশঙ্কা নেই।