সিলেটে টানা বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে ৪ উপজেলা ও নগরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এরই মধ্যে নিম্নাঞ্চলের মানুষ খোঁজ নিচ্ছেন নিরাপদ আশ্রয়ের। মঙ্গলবার (২০ মে) ভোর থেকে টানা বৃষ্টির কারণে নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
পানিতে তলিয়ে যায় সড়ক, আবাসিক এলাকা, বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিচতলা ডুবে যায়। বিপাকে পড়েন অফিসগামী মানুষ, স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও সাধারণ পথচারীরা।
মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেল পর্যন্ত গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জের কয়েক নিচু এলাকা প্লবিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
সকাল েেক বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা ছিল। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাসা েেক বের হননি। তবে, অনেককেই জরুরি প্রয়োজনে বৃষ্টিতে ভিজে কর্মস্থলে যেতে দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ, রেলস্টেশন, আখালিয়া, সুবিদবাজার, কাজলশাহ, মেজরটিলা, ইসলামপুর ও দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলা, বঙ্গবীর রোডসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এছাড়া ওসমানী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসেও হাঁটুসমান পানি জমেছে। ক্লাসরুমে পানি না ঢুকলেও হাসপাতাল এলাকার চলাচলে চরম বিঘ্ন ঘটেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় জমে থাকা পানি নামে ধীরগতিতে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সোমবার সকাল থেকেই পাহাড়ি ঢল নামতে শুরু করে গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ের পিয়াইন নদীতে। এতে মঙ্গলবার সকালে জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টসহ আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়। এছাড়া নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ায় নদীর দুই পাড়ে ভাঙন শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির মুখে পড়ে।
জানা যায়, জাফলংয়ের অধিকাংশ পর্যটন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বন্ধ করে ওেয়া হয়েছে সব ধরনের পর্যটন কার্যক্রম। নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্শে েিয়ছে প্রশাসন।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ৬টা েেক ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ১০১ মিলিমিটার ও সকাল ৯টা েেক ুপুর ১২টা পর্যন্ত আরও ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেট ও আশপাশের উপজেলাগুলোতে সকাল থেকেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এেিক গত কয়েক দিন ধরে সিলেটের নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। যদিও বিপৎসীমার নিচে রয়েছে সব নদীর পানি। তবে ভারতের মেঘালয় ও আসামে টানা ভারী বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। এতে সিলেটের মানুষের মধ্যে বন্যার আতঙ্ক চেপে বসেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সিলেটের নদ-নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। তবে কোনো নদীর পানি এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।
নগরীর ভার্থখলা এলাকার বাসি›া রফিক মিয়া কালবেলাকে বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে আমার ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে গেছে। আমরা সকাল থেকে খুব ভোগান্তিতে পড়েছি। সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) যি সময়মতো ছড়া-খাল পরিষ্কার করত তাহলে মানুষ ভোগান্তিতে পড়ত না। তারা যদি সব কিছ পরিষ্কার না করে তাহলে মানুষ দুর্ভোগে পড়বে।
নগরীর আখালিয়া বাসি›া আবুল আহমদের সঙ্গে কথা হয় কালবেলার। তিনি বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে আমাদের এলাকা। জলাবদ্ধতার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। সিসিক যি ছড়া-খাল ও নদী পরিষ্কার না করে তাহলে আমাদের ভোগান্তি কমবে না।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চম্পা নামের এক নার্স কালবেলাকে বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে আমাদের হাসপাতাল ও কলেজের প্রবেশপথ েেক ক্যাম্পাসজুড়ে হাঁটুসমান জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। পানির কারণে আমরা হাসপাতালে ঢুকতে খুব কষ্ট হয়েছে। এ জলাবদ্ধতা েেক আমরা মুক্তি চাই।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা খো েিয়ছে। পানি ্রুত নামিয়ে েিত ড্রেনের ছিদ্র বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগে যেসব ছিদ্রে নেট বসানো ছিল, সেগুলোও খুলে দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমরা কাজ করছি- আমারে সব প্রস্তুতি আছে। বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোর জন্য ইতোমধ্যে নৌকা ও অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্শেনা প্রদান করা হয়েছে।