পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া রিকশাচালক হত্যা এবং তাঁর লাশ গুমের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলামকে তিন দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার দুপুরে পঞ্চগড় আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হাসান রিমান্ড শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত বৃহস্পতিবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পঞ্চগড় থানার উপপরিদর্শক মানিক মিয়া সাবেক রেলপথমন্ত্রীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। পরে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সেই রিমান্ড শেষে তাঁকে আদালতে হাজির করে পঞ্চগড় সদর থানা-পুলিশ।
এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী থানার একটি মামলায় শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মির্জা সারোয়ার বলেন, তিন দিনের রিমান্ড শেষে আজ তাঁকে আদালতে হাজির করেছিল। তিনি কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। জানিয়েছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। এ ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেন না। একজন ভ্যানচালকের সঙ্গে তাঁর কোনো বিরোধ নেই। শুধু রাজনৈতিক কারণেই মামলাটি করা হয়েছে। তিনি এ-ও বলেছেন, তাঁর সঙ্গে মামলায় অনেককে আসামি করা হয়েছে। সবাই ষড়যন্ত্রের শিকার। শুধু তিনি নন, দেশব্যাপী এই ধরনের ষড়যন্ত্র মামলা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, তিনি নির্দোষ।
তিনি আরও বলেন, ‘জামিনের জন্য আগামীকাল আমরা আবেদন করব। শুনানি হবে এবং এ ঘটনার সঙ্গে যেহেতু সম্পৃক্ত নয়, আদালত যেন জামিনের বিষয়টা বিবেচনায় নেন। তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন।
মামলার এজাহারে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে পঞ্চগড় জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেন আল আমিন (২১)। সেদিন দুপুরে দুই তরুণের সঙ্গে বাড়ি ফেরার পথে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান সাকিবের বাড়ির সামনে তাঁকে আটক করেন মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কয়েকজন। পরে আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্দেশে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয় এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আল আমিনকে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়। এরপর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে ছাত্রলীগ নেতা সাদমান সাকিবের বাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় আল আমিনের সঙ্গে থাকা রায়হানুল ইসলাম ও সুজন ইসলাম নামের দুই তরুণ আহত হন। তবে তাঁদের দুজনকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করালেও আল আমিনকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
১৪ আগস্ট পরিবারের পক্ষ থেকে পঞ্চগড় সদর থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। এ ঘটনায় আল আমিনের বাবা মনু মিয়া গত ১০ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক রেলপথমন্ত্রী সুজনসহ ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা ও গুমের মামলা করেন। এ মামলায় আরও ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।