বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সারাদেশ

আট কুকুরছানা হত্যায় মামলা: সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী গ্রেপ্তার

পাবনার ঈশ্বরদীতে মা কুকুরের অগোচরে আটটি কুকুরছানাকে বস্তাবন্দী করে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার পর অভিযুক্ত আসামি নিশি রহমানকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় মামলাটি করেন।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ স ম আব্দুন নূর মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯-এর ৭ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী নিশি রহমানকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে মামলার পরপরই রাতে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত আসামি নিশি রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মামলার পর গতকাল রাত দেড়টার দিকে অভিযান চালিয়ে ঈশ্বরদী পৌর সদরে রহিমপুর গার্লস স্কুলের পাশের একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বলেন, ‘ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। যে কারণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার ফোন করেছিলেন। তিনি বলেছেন, এই ঘটনা অমানবিক। এই ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তাই প্রাণী হত্যায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এ ছাড়াও মহাপরিচালক স্যারও ফোন করে মামলা দায়ের করার নির্দেশনা দিয়েছেন।’

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘কুকুরছানা হত্যার ঘটনায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নকে সোমবার (১ ডিসেম্বর) গেজেটেড কোয়ার্টার ছাড়তে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারা মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে বাসা খালি করে অন্যত্র চলে গেছেন।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

তবে নয়নের স্ত্রী নিশি রহমান মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘বাচ্চাগুলো আমাদের বাসার সিঁড়ির পাশে থাকত এবং খুব ডিস্টার্ব করত। তাই আমি বাজারের ব্যাগে ভরে পুকুরের পাশে একটি শজনেগাছের গোড়ায় রেখে আসি। কীভাবে পুকুরে পড়েছে জানি না। আমি নিজে ছানাগুলোকে পুকুরে ফেলিনি।’

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের একটি কোনায় থাকত টম নামের একটি কুকুর। এক সপ্তাহ আগে টম আটটি বাচ্চা প্রসব করে। সোমবার সকাল থেকে তার ছানাগুলো না পেয়ে পাগলপ্রায় অবস্থায় ছোটাছুটি করতে দেখা যায় মা কুকুরকে।

৮ কুকুরছানা হত্যায় সরকারি কর্মকর্তাকে বাসা ছাড়তে বাধ্য করল প্রশাসন, মামলার প্রস্তুতি৮ কুকুরছানা হত্যায় সরকারি কর্মকর্তাকে বাসা ছাড়তে বাধ্য করল প্রশাসন, মামলার প্রস্তুতি পরে উপজেলা পরিষদের কর্মচারীরা জানতে পারেন, ঈশ্বরদী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়ন ও তাঁর স্ত্রী জীবন্ত আটটি কুকুরছানাকে বস্তার মধ্যে বেঁধে রোববার রাতের কোনো এক সময় ফেলে দেন উপজেলা পরিষদের পুকুরে। এক দিন পর সোমবার সকালে পাওয়া যায় কুকুরছানাগুলোর মরদেহ। দুপুরের পর মৃত কুকুর ছানাগুলোকে ইউএনওর বাসভবনের পাশে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাড়ির কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সোমবার সকালে নয়ন স্যার মোটরসাইকেলে বাইরে যাচ্ছিলেন। আমি ছানাগুলোর কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছু জানেন না বলেন। তখন তাঁর ছেলে বলে, “আম্মু ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।” এরপর আমরা পুকুরে গিয়ে একটি বস্তা ভাসতে দেখি। তুলে খোলার পর আটটি ছানাকেই মৃত অবস্থায় পাই।

মৃত ছানাগুলো দেখে মা কুকুরটি প্রচণ্ড আর্তনাদ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মীরা কুকুরটিকে চিকিৎসা দেন। মঙ্গলবার সারা দিন ছানাগুলোর খোঁজে মা কুকুরকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ উপজেলা চত্বর এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।

এই সম্পর্কিত আরো