জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ৩ হাজার ৩৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আব্দুর রশিদ জিতু। তিনি ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ তাকে সাবেক ছাত্রলীগ বলে দাবি করছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন তিনি গুপ্তছাত্রশিবির।
তবে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ছাত্রলীগের সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটিতে সদস্য ছিলেন জিতু। গত বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি মোছার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করলে অনশনে বসেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি এনামুর রহমান এনাম। সেই সময় জিতু সংহতি জানিয়েছিলেন।
তবে জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাতারে নেমে আসেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছিলেন প্রথম সারিতে। ছিলেন ‘গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন’-এর মূল নেতৃত্বেও।
জিতু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে সমন্বয়ক ছিলেন। একই সময় কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করেন। তবে গত বছরের ৩ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৪ সমন্বয়ক ও চার সহসমন্বয়ক পদত্যাগ করেন। এর মধ্যে ছিলেন জিতু। সেই সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে ‘সরকারি দলের মতো আচরণ ও গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট-বিরুদ্ধ কাজে’ যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলে তারা পদত্যাগ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্টের আগেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হয় ছাত্রলীগ। কোণঠাসা হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তারাও। তবে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) পদে বসেন আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষক নেতা বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজির অধ্যাপক সোহেল আহমেদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাকসুর এক সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী বলেন, ছাত্রদল, শিবির বা বাগছাসকে টাকা দেওয়ার জন্য, লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার জন্য তাদের দল রয়েছে। কিন্তু জিতুর প্যানেলের কে আছে? এত টাকা তিনি কোথা থেকে পেয়েছেন?
নির্বাচনের আগে একটি টকশোতে ছাত্রদল মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান অভিযোগ করেন, ক্যাম্পাসে একটি আলাপ রয়েছে– ঘুমন্ত ছাত্রলীগকে জিতু শেল্টার দিচ্ছেন। বক্তব্যটি শুনেই টকশোতে জিতু উত্তেজিত হয়ে যান।
তবে এসব অস্বীকার করে নির্বাচনের আগের রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিও বার্তায় জিতু বলেন, জাকসু নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে বিভিন্ন মহল আমাকে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগকে নিয়ে যেসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলেছে, এর তীব্র বিরোধিতা করছি। এসবের যদি কোনো একটির প্রমাণ তারা দিতে পারে, তাহলে আপনারা যে শাস্তি দেবেন, তা মাথা পেতে নেব। আমাদের কাছে পরাজিত হওয়ার ভয়ে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর আনা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।