রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
ক্যাম্পাস

গত বছরের ৫ আগস্ট ভাঙচুর, এক বছরেও সংস্কার হয়নি ‘চেতনা ৭১’

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই রাতের সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য চেতনা ’৭১-এ ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। এক বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভাস্কর্যটি সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

এই ভাস্কর্য সংসআরে কয়েকজন শিক্ষার্থী উদ্যোগ নিয়ে আর্থিক সহযোগিতার আহ্বান জানান। কিন্তু পরে তাদেরও কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। সংস্কার না করায় ভাস্কর্যটি সৌন্দর্য হারাচ্ছে।

চেতনা ’৭১ সিলেটের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য। এতে এক ছাত্র বাংলাদেশের পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন, আরেক ছাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন বই হাতে। ভাস্কর মোবারক হোসেন নৃপাল এটি তৈরি করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট রাত ১২টার দিকে অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলে হেলমেট পরিহিত শতাধিক দুর্বৃত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকে। এরপর চেতনা ’৭১ ভাস্কর্যে কিছুক্ষণ দেশি অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে ভাস্কর্যের পতাকা হাতে তরুণের প্রতিকৃতির মুখের একপাশ, পিঠের অংশ ও পতাকার লাঠির নিচের অংশ ভেঙে যায়। এ ছাড়া বেদিতে স্টিল দিয়ে তৈরি ‘চেতনা-৭১’ লেখা অংশটি ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। আঘাত করা হয় ভাস্কর্যের আরও কিছু জায়গায়।

জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। ২০০৯ সালের ২৬ মার্চে অস্থায়ীভাবে এটি স্থাপন করেন তারা। আর্থিক সহযোগিতা করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এবং একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালে ভাস্কর্য উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। এরপর থেকে ক্যাম্পাসের বুকে শিক্ষার্থীদের কাছে একাত্তরের চেতনা বহন করছে এই ভাস্কর্য।

এর আগেও চেতনা ’৭১-এ ভাঙচুর চালানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে হামলা চালিয়ে ভাস্কর্যটির নামফলক ভাঙচুর করে ইসলামী ছাত্রশিবির। এ সময় তারা কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে ভাস্কর্য সংস্কার করা হয়। কিন্তু এবার ভাঙচুর চালানোর এক বছরেও ভাস্কর্য সংস্কার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুর ইসলাম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই ভাস্কর্য কেবল একটি শিল্পকর্ম নয়, এটি মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য ও চেতনাকে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। ভাঙাচোরা অবস্থায় ভাস্কর্যটি যেমন দৃষ্টিকটু দেখায়, তেমনি আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকেও অবমাননা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি থাকবে, অবিলম্বে চেতনা ’৭১ ভাস্কর্যটি সংস্কার করা।’

ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মুহয়ী শারদ বলেন, ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গর্ব। শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসজুড়ে একাত্তরের প্রতিনিধি করে এমন প্রতীক চেতনা ’৭১। কিন্তু অদ্ভুত ও হতাশাজনক বিষয় হচ্ছে, এক বছর পরও এ ভাস্কর্য সংস্কার করা হয়নি। ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে ক্যাম্পাসের একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রতীকটি এভাবে অবহেলায় ফেলে রাখা বাংলাদেশের অস্তিত্ব সংকটের দিকে ইঙ্গিত করছে কিনা, সেটা নতুন চিন্তার বিষয়।’

শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে সংস্কারের জন্য স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী মুহতাসিম ফেরদাউস মাহিনসহ অনেকেই গত বছরের আগস্টে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তাদেরও কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে তাদের বক্তব্যও মেলেনি।

শাবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম বলেন, ‘প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে আমরা ইতোমধ্যে আর্কিটেকচার বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। এটা কীভাবে সংস্কার করা যায়, এ বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত দেবেন।’

এই সম্পর্কিত আরো