দেশে ডিজিটাল আর্থিক সেবার সম্প্রসারণ ও ব্যাংকিং খাতের উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করতে আগামী ১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদনপত্র গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এক বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক খাতে বৈশ্বিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আর্থিক সেবা প্রদানের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি আর্থিক ব্যবস্থার আওতা আরও বিস্তৃত করার ক্ষেত্রে এর ভূমিকার ওপরও জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগকে কাজে লাগানো এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে ক্ষুদ্র, কুটির ও ছোট উদ্যোক্তাদের (সিএমএসই) উন্নয়ন অপরিহার্য।
আর এ ক্ষেত্রে সহজ ঋণপ্রাপ্তি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে দেখা হচ্ছে এই ডিজিটাল ব্যাংক ব্যবস্থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, উপযুক্ত আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৩১ ধারা অনুযায়ী নীতিগতভাবে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যোগ্য স্পনসরদের সিলগালা করা আবেদনপত্রের সঙ্গে (অ-ফেরতযোগ্য) ৫ লাখ টাকা (প্রায় ৪ হাজার ৪০০ পাউন্ড) প্রসেসিং ফি এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিতে হবে। অসম্পূর্ণ আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে। আবেদনপত্র সরাসরি জমা দেওয়ার পাশাপাশি ই-মেইলের মাধ্যমে সমস্ত নথি জমা দিতে হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে (apply.db@bb.org.bd) প্রকাশ করা হয়েছে।
নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স স্থগিত ও ডিজিটাল ব্যাংক লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনার পর এ সিদ্ধান্তের কথা জানাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫২টি আবেদন গ্রহণ করে, যারমধ্যে ৮টি প্রাথমিক অনুমোদন পায় এবং দুটি প্রতিষ্ঠানকে সম্মতিপত্র (লেটার অব কনসেন্ট) দেওয়া হয়।
বিশ্বব্যাংক অবশ্য আগেই বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংক লাইসেন্স প্রদানে স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিল। ২০২৩ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ: কান্ট্রি প্রাইভেট সেক্টর ডায়াগনস্টিক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) ও বহুপাক্ষিক বিনিয়োগ গ্যারান্টি সংস্থা (মিগা) উল্লেখ করে—দুর্নীতি, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অস্পষ্টতা এবং লাইসেন্স বণ্টনে অসঙ্গতি বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধির প্রধান অন্তরায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু আবেদনকারীকে ভবিষ্যতে লাইসেন্স দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও অন্যরা এ ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা পায়নি, ফলে তারা অনিশ্চয়তায় রয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাপী শাখাবিহীন ব্যাংকিংয়ের দিকে অগ্রযাত্রার অংশ হলো ডিজিটাল ব্যাংক ব্যবস্থা। পার্শ্ববর্তী ভারত ও পাকিস্তান ২০২২ সালেই এ ব্যবস্থা চালু করেছে। বর্তমানে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রদানকারীরা সরাসরি ক্ষুদ্র ঋণ (ন্যানো লোন) দিতে না পারলেও ডিজিটাল ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বা আলাদা লাইসেন্সের মাধ্যমে তা দিতে পারে।
বর্তমানে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ৫০ হাজার টাকা নির্ধারত রয়েছে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত কার্যক্রম ও আর্থিক সক্ষমতা দেখাতে পারলে এ সীমা বাড়ানো হতে পারে।