মার্কিন পারস্পরিক শুল্কহার স্বস্তিদায়ক হলেও মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। কেননা অনেক দেশ এখনো আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এই বর্ধিত শুল্ক শিল্পের ওপর কী প্রভাব ফেলবে সেটি বুঝতে অন্তত এক মৌসুম অপেক্ষা করতে হবে। বর্ধিত শুল্ক উৎপাদক না বায়ার পরিশোধ করবে সে বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি।
শনিবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু। এ সময় সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মাহমুদ হাসান বলেন, আগে যুক্তরাষ্ট্রে ১৬.৫ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হয়েছে। এখন ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্কের ফলে মোট শুল্কহার দাঁড়িয়েছে ৩৬.৫ শতাংশ। যা সুনির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন পণ্যের জন্য বিভিন্ন হারে প্রযোজ্য হবে। বাণিজ্য চুক্তিতে একটি ধারা আছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে। সেটি হচ্ছে, পণ্য তৈরিতে ন্যূনতম ২০ শতাংশ আমেরিকার কাঁচামাল ব্যবহার করা হলে শুল্ক হারে কিছুটা ছাড় পাওয়ার বিধান রয়েছে। তাই মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহারের ধারাটির স্পষ্টীকরণ প্রয়োজন, একই সঙ্গে মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহারেরে উৎস অনুসরণ পদ্ধতি (ট্রেসিবিলিটি) কী হবে, সেটি নির্ধারণে মার্কিন প্রশাসনের সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি ভারসাম্যপূর্ণ শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করেছে। বিগত ৪ মাস ধরে আমরা এটি নিয়ে উদ্বেগে ছিলাম। বাংলাদেশের আমদানি শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে, যা প্রধান পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিযোগীদের তুলনায় সমান বা কাছাকাছি এবং কিছু প্রধান প্রতিযোগী যেমন চীন ও ভারতের তুলনায় কম। বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে টিম আলোচনার মাধ্যমে শুল্কসংক্রান্ত একটি সমূহ বিপর্যয় এড়াতে পেরেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে স্পষ্ট বলা আছে, কিছু দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বা নিরাপত্তা চুক্তি আলোচনা এখনো চলমান রয়েছে। যেগুলো সম্পাদিত হলে এসব দেশের শুল্ক আরও কমতে পারে। তাই বাংলাদেশকে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
সরকারকে নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক অবধারিতভাবে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়াবে। যেখানে শিল্পগুলো আগে থেকেই ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে যুদ্ধ করছে। এক্ষেত্রে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো যাতে করে ব্যবসা থেকে ছিটকে না পড়ে, বিষয়টি সরকারকে নজরদারিতে রাখতে হবে। শিল্প ও দেশের স্বার্থে সরকার নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখবে, শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ করবে বলে আশা করছি।
গার্মেন্ট মালিকদের উদ্দেশে মাহমুদ হাসান বলেন, বিগত দশকে কর্মক্ষত্রে আমরা নিরাপত্তা ও সামাজিক-পরিবেশগত ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি। এখন নিজেদের প্রয়োজনে শিল্পে মূল্য সংযোজন বাড়াতে হবে। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, নতুন ডিজাইন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে, বাজার ও পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের শুধু সবচেয়ে বড় বাজার না, তারা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য অংশীদার। এই অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করে তোলার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার যত্নশীল থাকবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাড়তি শুল্ক তৈরি পোশাক রপ্তানিতে কী প্রভাব ফেলবে তা বুঝতে এক মৌসুম অপেক্ষা করতে হবে। আশার বিষয় হচ্ছে, চীনের শুল্কহার বাংলাদেশের তুলনায় বেশি। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অর্ডার স্থানান্তরের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই অনেক মার্কিন ক্রেতা স্থগিত করা অর্ডার পুনরায় দিয়েছেন। নতুন অর্ডার দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য তারা ভোক্তার আচরণ পর্যবেক্ষণ করছেন।