জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের রাজস্ব আহরণ অগ্রগতি ও পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের সকল সদস্য, সকল কমিশনার ও মহাপরিচালকগণ এবং সকল বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিদায়ী অর্থবছরের কাস্টমস হাউসসমূহ এবং ভ্যাট কমিশনারেটসমূহের রাজস্ব আহরণচিত্র তুলে ধরা হয়।
অর্থ বছর শুরুর ৪ মাসে দেশের ব্যবসা বাণিজ্য কার্যক্রম স্বাভাবিক না থাকা এবং শেষের ২ মাসে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম স্বাভাবিক না থাকা স্বত্ত্বেও যে সকল ভ্যাট কমিশনারেট এবং কাস্টমস হাউস বিগত বছরের তুলনায় বেশি রাজস্ব আদায় করেছে সে সকল কমিশনারেট এবং কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয় ধন্যবাদ জানান।
পরবর্তীতে প্রতিটি ভ্যাট কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস, বন্ড কমিশনারেট, নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা, শুল্ক মূল্যায়ন কমিশনারেট, কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিশনারেট এবং ডিউটি ড্র ব্যাক কমিশনারেটসমূহের বিগত বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে ব্যবসা-বান্ধব সেবার উন্নয়ন ও কর ফাঁকি রোধকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চেয়ারম্যান মহোদয় সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন।
তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্যগণকে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম আরও কার্যকর উপায়ে তদারক করার নির্দেশনা প্রদান করেন। কাস্টমস হাউজ কর্তৃক দ্রুততম পণ্য খালাসের ওপর চেয়ারম্যান মহোদয় বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। যে সকল পণ্য দেরিতে খালাস করা হয় সেগুলো কেন দেরিতে খালাস করা হয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে তার সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে এসব ক্ষেত্রে কি পরিমাণ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে তার প্রতিবেদন নিয়মিতভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠানোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
একই ভাবে যেসকল বন্ড লাইসেন্স আবেদন দেরিতে নিষ্পত্তি করা হয়েছে অথবা দীর্ঘদিন যাবৎ নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠাতে সকলকে নির্দেশনা দেয়া হয় । বন্ড এর নিরীক্ষা কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করা না হলে তার কারণ উল্লেখসহ প্রতিবেদন নিয়মিতভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে প্রেরণের জন্য সভায় নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
কাস্টমস হাউস, কাস্টমস গোয়েন্দা, ভ্যাট গোয়েন্দা এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল হতে যেসকল আমদানি-রপ্তানি কারকের বিন লক করা হয় তার সুনির্দিষ্ট কারণ এবং এধরনের প্রতিটি বিন লক হতে কি পরিমাণ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করা হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে নিয়মিতভাবে প্রেরণের নির্দেশনা দেওয়া হয় ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চলমান অটোমেশন কার্যক্রম তথা iVAS, বন্ড অটোমেশন, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো, AEO, Export Import Hub portal ইত্যাদিকে অধিকতর ব্যবহার উপযোগী করে কাস্টমস ও ভ্যাট আদায় কার্যক্রম সম্পূর্ণ অটোমেট করে ব্যবসা ও করদাতা বান্ধব কর সংস্কৃতি তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ আরোপ করেন ।
সভায় সচিব, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রাজস্ব কমে যাওয়ার ক্ষেত্র ও কারণসমূহ চিহ্নিত করে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করতে নির্দেশনা প্রদান করেন। যেসব কমিশনারেটে রাজস্ব আদায়ে নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি হয়েছে সেসব কমিশনারেটের কমিশনারের কাছে কারণ জানতে চান এবং ভবিষ্যতে ভালো করার জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
ট্রেড ফেসিলিটেশনকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে ১ দিনের মধ্যে পণ্য খালাস করে প্রয়োজনে পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট (PCA) সম্পাদনের জন্য চেয়ারম্যান মহোদয় নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রতিটি কাস্টমস হাউজকে পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিটের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশনা ও প্রদান করা হয়।
দ্রততম সময়ের মধ্যে কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিশনারেটকে কার্যকর করার বিষয়ে তিনি জোর দেন। রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিশনারেটে দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল পদায়নের জন্য সদস্য (কাস্টমস প্রশাসন) কে নির্দেশনা প্রদান করা হয।
ASYCUDA World সিস্টেমের বিষয়ে এর ব্যবহারকারীগণ প্রতিনিয়ত নানাবিধ অভিযোগ করে আসছেন বিধায় এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মহোদয় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কাঙ্খিত মানের সেবা প্রদানে সক্ষম না হওয়ায় Asycuda সিস্টেমের ওপর ব্যবসায়ীদের তীব্র আস্থাহীনতা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তাই উন্নত দেশসমূহের আদলে Asucuda সিস্টেমের বিকল্প একটি সফ্টওয়্যার সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে মর্মে তিনি সকলকে অবহিত করেন। কাস্টমস ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত নতুন সিস্টেমটি প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হলে প্রথমে এর পাইলটিং করা হবে। সফল পাইলটিং শেষে নতুন সিস্টেমে কাস্টমস ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম পুরোপুরি স্থানান্তর করা হবে ।
দেশের অর্থনীতিকে এবং ব্যবসাবাণিজ্য সচল রাখার ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভূমিকা চেয়ারম্যান মহোদয় সকলকে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেন। সভায় উপস্থিত অন্যান্য উর্ধতন কর্মকর্তাগণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর উপর জোর দেন।